টিন সার্টিফিকেট কি? টিন সার্টিফিকেট কি কি কাজে লাগে? টিন সার্টিফিকেট এর সুবিধা এবং অসুবিধা

টিন সার্টিফিকেট সম্পর্কে না জানলেই বিপদ? আজকে আপনাদেরকে সম্পূর্ণভাবে টিন সার্টিফিকেট কি?টিন সার্টিফিকেট কি কি কাজে লাগে? টিন সার্টিফিকেটের সুবিধা অসুবিধা থেকে শুরু করে টিন সার্টিফিকেট এর প্রত্যেকটি বিষয় আপনাদেরকে জানাবো ইনশাল্লাহ।

বর্তমানে বাংলাদেশের অনেক সাধারন মানুষ আছে যারা এখনো পর্যন্ত টিন সার্টিফিকেট তৈরি করেনি এবং টিন সার্টিফিকেট সম্পর্কে এখনো জানেনা। পোস্টটি শুরু করা পূর্বে শুধু এতোটুকু আপনাদেরকে বলব যে টিন সার্টিফিকেট না করে থাকলে আপনিই বিপদে পড়বেন। কেন বিপদে পড়বেন এই বিষয়টি অটোমেটিকলি পোস্টটি সম্পন্ন করলে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন। তাই আশা করব পোস্টটি আপনার স্কিপ না করে একদম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন আপনি যদি টিন সার্টিফিকেট সম্পর্কে এখনো পর্যন্ত অবগত না থাকেন।

 

TIN Certificate কি?

TIN শব্দের ফুল মিনিং হচ্ছে -Taxpayer Identification Number।এটি একটি বিশেষ নম্বর, যা দিয়ে বাংলাদেশের কর দাতাদের চিহ্নিত করা হয়। টিআইএন সার্টিফিকেট মূলত করদাতাদের নম্বর বহন করে। অর্থাৎ টিআইএন বা টিআইএন সার্টিফিকেট করদাতার পরিচয়পত্রের মতো কাজ করে।

আরো সহজ বাংলা ভাষায় যদি বলি, টিন সার্টিফিকেট এমন একটি সার্টিফিকেট এই টিন সার্টিফিকেট এর মাধ্যমে একজন করদাতা বাংলাদেশের যে কোন নাগরিকের প্রতি অর্থ বছরে সম্পদের হিসাব নিকাশ রাখা সরকারি বড় মাধ্যম।

আবার অনেকে চিন্তা করছেন যে এই টিন সার্টিফিকেট শুধু মাত্র হয়তো করদাতা বা ট্যাক্সপিয়ারদের ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়ে থাকে,বিষয়টি কিন্তু এরকম না কারণ টিন সার্টিফিকেট বর্তমানে অনেক বিষয় প্রয়োজন হয়ে থাকে নিচে অবশ্যই আমি আলোচনা করবো।

টিন সার্টিফিকেট কি কি কাজে লাগে?

টিন সার্টিফিকেট বর্তমানে অনেক কাজে ব্যবহারিত হয়ে থাকে। কিন্তু আমি আপনাদেরকে সবচাইতে প্রয়োজনীয় যে সকল বিষয়ে টিন প্রয়োজন হয়ে থাকে সেই সকল বিষয় নিচে দিয়ে দিচ্ছি।

  • আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স তৈরি করতে বা নবায়ন করতে অবশ্যই আপনাকে টিন সার্টিফিকেট দেখাতে হবে।
    আপনি বাংলাদেশ সরকারের নির্বাচিত প্রার্থী হিসাবে যোগ দিতে অবশ্যই আপনাকে টিন সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে।
  • আপনি যখন কোন ব্যবসায়িক শেয়ার কিনতে যাবেন তখন অবশ্যই আপনার এই টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে।
  • যেকোনো ধরনের ছোট বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আপনি রেজিস্ট্রেশন করতে চাইলে অবশ্যই আপনার এই টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে।       
  • গাড়ি মোটর বাস অথবা জিপের লাইসেন্স করতে চাইলেও আপনার এই টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে।
  • বর্তমানে সরকারি বেসরকারি যেকোনো ধরনের ব্যাংক থেকে যেকোনো ধরনের ব্যাংক লোন নিতে অবশ্যই আপনার টিন সার্টিফিকেট বা আয়কর ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিতে হবে।
  • যে কোন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড নিতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই টিন সার্টিফিকেটের সঙ্গে আয়কর রিটার্ন সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে।
  • যেকোনো ধরনের লাইসেন্স যেমন ডাক্তারদের প্রকৌশলীদের এই সকল ক্ষেত্রে আপনার টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে।
  • সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে আপনি জমির মালিক হতে চাইলে বা বাসা বাড়ির মালিক হতে চাইলে অবশ্যই আপনার টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে।
  • সবচাইতে বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে আয়কর রিটার্নটি জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রত্যেকটি ব্যক্তির এই টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে।

এছাড়াও আরো অনেক বিষয় রয়েছে যেই সকল বিষয় আপনি গভমেন্ট রিলেটিভ কাজ করতে গেলে অবশ্যই আপনার এই টিন সার্টিফিকেটটি দরকার হবে।

টিন সার্টিফিকেট বেশি দরকার হয় যে কাজে?

উপরে আমি বিভিন্ন কারণ দেখিয়েছি যে সকল কারণে টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন হয়ে থাকে এছাড়াও বাংলাদেশে অন্যান্য দেশের মতোই সরকারকে আপনার ইনকামের ট্যাক্স দেওয়ার ক্ষেত্রে এই টিন সার্টিফিকেটটি সবচাইতে বেশি প্রয়োজনীয়তা আছে। আর এই ইনকাম ট্যাক্স নিবন্ধন করতে হলে আপনাকে অবশ্যই টিন সার্টিফিকেট করতে হবে।

👉গুগল নিউজে সবার আইটি বিডি সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন

  • জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী আপনি যদি মাসে ১৬ হাজার টাকার সমান অর্থ আয় করেন তাহলে অবশ্যই টিন সার্টিফিকেট থাকা দরকার।
  • সব ধরনের পুরুষদের বছরে লাখ সব বয়সের নারী এবং ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে সব নাগরিক সাড়ে তিন লাখ এবং প্রতিবন্ধীদের বছরে সাড়ে চার লাখ টাকার উপরে আয় থাকলে প্রতি অর্থ বছরের আপনাকে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে।

  • এছাড়াও আপনি যদি করসীমার নিচে থাকেন তবে টিআইএন দেখে শূন্য বিবরণী জমা দিতে হবে। অর্থাৎ প্রতি অর্থ বছরে আয়কর জিরো রিটার্ন আপনাকে সাবমিট করতে হবে।

টিন সার্টিফিকেট এর সুবিধা সমূহ

ইতিপূর্বে উপরে লেখাগুলি থেকে আপনারা অলরেডি বুঝে ফেলেছেন যে টিন সার্টিফিকেটের থাকলে কি সকল সুবিধার
আওতায় আপনি থাকবেন। এরপরেও আমি কিছু বিশেষ সুবিধার কথা নিচে আলোচনা করছি।

  • টিন সার্টিফিকেট থাকার প্রথম সুবিধা হচ্ছে আপনি একজন ট্যাক্স প্রদানকারী হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে নিবন্ধিত সদস্য হবেন।
  • আপনি নিয়মিত আপনার আয়কর প্রতি অর্থবছরে জমা দিবেন সরকার সে টাকাগুলি নিয়ে দেশের উন্নয়ন করতে পারবে অর্থাৎ আপনি দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে পারবেন।
  • দেশের রাস্তাঘাট স্কুল হাসপাতাল সেবামূলক কাজে আপনি নিজে কিন্তু এই আয়কর দেওয়ার মাধ্যমে আপনি উন্নয়ন কাজে জড়িত থাকবেন।
  • টিন সার্টিফিকেট রেজিস্ট্রেশন এর মাধ্যমে আপনি একজন করদাতা গর্বিত সদস্য হিসাবে থাকবেন।
  • আপনার যদি টিন সার্টিফিকেট বা আপনি নিয়মিত প্রতি অর্থ বছর কর প্রদান করে থাকেন তাহলে আপনার সঞ্চিত টাকা ব্যাংকে ১০% হারে থাকবে এছাড়া ১৫% দিতে হবে।
  • এছাড়া বাংলাদেশের যেকোনো ধরনের ব্যাংক বিমা থেকে আপনি লোন সুবিধা নিতে হলে অবশ্যই
    টিন সার্টিফিকেট থাকতে হবে। অর্থাৎ টিন সার্টিফিকেটের জন্য আপনি এই সুবিধাটি ভোগ করতে পারবেন।
  • সরকার বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পেশাজীবী বা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা তাদের বিভিন্ন সুবিধা প্রণোদনা দিয়ে থাকে যার কোনটাই
    টিন সার্টিফিকেট ছাড়া পাওয়া সম্ভব না।

এছাড়াও টিন সার্টিফিকেট খোলা থাকলে আপনার বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা সরকারি ভাবে থাকবেন। এজন্য এখনো পর্যন্ত আপনি যদি আপনার টিন সার্টিফিকেটটি না করে থাকেন তাহলে একদম ঘরে বসে অনলাইন থেকে টিন সার্টিফিকেটটি করে ফেলুন।

টিন সার্টিফিকেটের অসুবিধা

প্রত্যেকটি জিনিসের যেমন সুবিধা রয়েছে তেমন অসুবিধাও রয়েছে, টিন সার্টিফিকেট ও তার ব্যতিক্রম নয়। টিন সার্টিফিকেট এর সুবিধা যেমন রয়েছে তেমন কয়েকটি অসুবিধা রয়েছে। তা আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি টিন সার্টিফিকেটের সুবিধায় সবচাইতে বেশি।

এরপরেও আমি বিশেষ কয়েকটি টিন সার্টিফিকেট থাকার অসুবিধা নিচে দিয়ে দিচ্ছি –

সবচাইতে বড় অসুবিধা হচ্ছে আপনার টিন সার্টিফিকেট থাকলে প্রতি অর্থবছরের মধ্যে আপনাকে জিরো আয় করে রিটার্ন হলেও আপনাকে অবশ্যই জমা দিতে হবে।

অনেকে চিন্তা করে যে আমার আয় আয়কর যোগ্য নয় তাহলেও কি টিন সার্টিফিকেট থাকলে আমার আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে?

জি আপনার যদি টিন সার্টিফিকেট থাকে তাহলে প্রতি অর্থবছরে আপনার আয়কর রিটার্ন জিরো হলেও আপনার প্রতি বছর সাবমিট করতে হবে। আর যদি আপনার ইনকাম কর যোগ্য হয়ে থাকে তাহলে তো অবশ্যই প্রতি অর্থবছরে বাংলাদেশ সরকারকে আপনার আয়ের উপরে আয়কর ট্যাক্স দিতে হবে।

আপনার টিন সার্টিফিকেট আছে কিন্তু আপনি যদি পরপর তিন বছর আপনি আয়কর জিরো রিটার্ন ও জমা না দেন সে
ক্ষেত্রে আপনি সমস্যার সম্মুখীন হবেন। আপনার যত অর্থ রয়েছে এই টাকাগুলিকে কালো টাকা বলা হবে। এছাড়াও আপনি বিভিন্ন ধরনের মামলা মোকদ্দমার মধ্যে জড়িত হয়ে যাবেন।

এছাড়াও আপনি বিভিন্ন ধরনের ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ব্যাংক লোন এগুলি আপনি এই সুবিধা গুলি ভোগ করতে পারবেন না।

তাই আপনি যদি টিন সার্টিফিকেট যোগ্য হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই টিন সার্টিফিকেট তৈরি করুন । পাশাপাশি আপনি যদি আয়কর রিটার্ন সাবমিট দেওয়া যোগ্য হয়ে থাকেন তাহলে প্রতি অর্থবছর আয়কর রিটার্ন জমা দিন।

টিন সার্টিফিকেট ১২ সংখ্যার কম হলে কি করব?

আপনার টিন সার্টিফিকেটের নাম্বার যদি ১২ সংখ্যা কম হয় তাহলে আপনি নতুন করে রি-রেজিস্ট্রেশন করুন।

কখন টিন সার্টিফিকেট করবেন?

প্রতিবছর আপনারা উপার্জন ২ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকার উপরে হয় এছাড়াও টিন সার্টিফিকেট এর প্রয়োজনীয়তা আসে তখনই আপনি টিন সার্টিফিকেট করে ফেলবেন।

অনলাইনে টিন সার্টিফিকেট করতে কি কি লাগে?

তেমন কিছু প্রয়োজন নেই আপনার একটা জাতীয় পরিচয় পত্র মোবাইল ফোন নাম্বার এবং কোম্পানি বা অন্যান্য বিষয়ের ক্ষেত্রে, সে কোম্পানি ট্রেড লাইসেন্স নাম্বার।

টিন সার্টিফিকেটের ন্যূনতম ট্যাক্স কত?

টিন সার্টিফিকেটের ন্যূনতম ট্যাক্স ঢাকা ও চট্টগ্রামের মধ্যে পাঁচ হাজার টাকা। অন্যান্য সিটির জন্য তিন হাজার টাকা।

ফ্রিল্যান্সারদের ইনকামের উপর কোন ট্যাক্স দিতে হয় কিনা?

২০২৪ সাল পর্যন্ত ফ্রিল্যান্সার ইনকামের কোন ট্যাক্স দিতে হবে না।

শেষ কথা –আশা করছি আপনারা যারা টিন সার্টিফিকেট সম্পর্কে অবগত ছিলেন না এতদিন পর্যন্ত। তারা উপরের এই আর্টিকেল থেকে টিন সার্টিফিকেট কি টিন সার্টিফিকেট কিভাবে করবেন, অসুবিধা-সুবিধা সকল বিষয়গুলি আপনারা জানতে পেরেছেন। এছাড়াও টিন সার্টিফিকেট এবং আয়কর রিটার্ন সম্পর্কিত সকল বিষয়ে জানতে আমাদের ওয়েবসাইটের অন্যান্য পোস্টগুলি পড়ুন। পাশাপাশি আপনারা আমাদের ইউটিউব চ্যানেলের সাথে যুক্ত থাকলে এই বিষয়ে সকল ভিডিওগুলি আপনারা সহজে পেয়ে যাবেন।

বিশেষ দ্রষ্টব্য – সম্পূর্ণ ইনফরমেশন গুলো অনলাইন থেকে সংগৃহীত।

👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

✅আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন 🤔

আপনার জন্য-

মোবাইল দিয়ে টিন সার্টিফিকেট তৈরি
(Tin Certificate) অনলাইনে টিন সার্টিফিকেট তৈরি করার নিয়ম

আমাদের আরো সেবা সমূহ :-

↘️আমার ভিডিওগুলো পাবেন যে সকল মাধ্যমে 👇

➡️YouTube চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে রাখুন –এখানে ক্লিক করুন

➡️Facebook পেজ ফলো করে রাখুন –এখানে ক্লিক করুন

➡️Instagram চ্যানেল ফলো করে রাখুন –এখানে ক্লিক করুন

➡️WhatsApp চ্যানেল ফলো করে রাখুন – এখানে ক্লিক করুন

➡️Telegram গ্রুপ ফলো করে রাখুন –এখানে ক্লিক করুন

➡️Treads চ্যানেল ফলো করে রাখুন –এখানে ক্লিক করুন

➡️TikTok চ্যানেল ফলো করে রাখুন-এখানে ক্লিক করুন

Leave a Comment